ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংক: দারিদ্র্য বিমোচনের কাহিনী

 ড. মুহাম্মদ ইউনূস হলেন বাংলাদেশে বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ। তিনি মাইক্রোক্রেডিট ধারণার প্রবর্তক। তাঁর উদ্ভাবিত এই ধারণা বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হয়েছে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংক: দারিদ্র্য বিমোচনের কাহিনী
ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংক: দারিদ্র্য বিমোচনের কাহিনী

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জীবনী

ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১৯৪০ সালের ২৮ জুন চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। এছাড়াও, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। অধ্যাপক ডঃ মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশী নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদ। তিনি ক্ষুদ্রঋণ ধারণার প্রবর্তক। অধ্যাপক ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা। মুহাম্মদ ইউনূস এবং তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক যৌথভাবে ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। তিনি প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে এই পুরস্কার লাভ করেন। ইউনূস বিশ্ব খাদ্য পুরস্কার সহ আরও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেছেন।

প্রাথমিক শিক্ষা

ড. ইউনূসের প্রাথমিক শিক্ষা চট্টগ্রামের লামাবাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সম্পন্ন হয়। এরপর তিনি চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন।

উচ্চ শিক্ষা

ড. ইউনূস উচ্চ শিক্ষার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তিনি অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

পরিবার

মুহাম্মদ ইউনূস ১৯৪০ সালের ২৮ জুন চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলার বাথুয়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম হাজী দুলা মিয়া সওদাগর, এবং মাতার নাম সুফিয়া খাতুন। মুহাম্মদ ইউনূসের সহধর্মিনী ডঃ আফরোজী ইউনুস। ব্যক্তিগত জীবনে মুহাম্মদ ইউনূস দুই কন্যার পিতা। মুহাম্মদ ইউনূসের ভাই মুহাম্মদ ইব্রাহিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং ছোট ভাই মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর একজন জনপ্রিয় টিভি ব্যক্তিত্ব।

কর্ম জীবন

১৯৫৭ সালে মুহাম্মদ ইউনূস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগের সম্মান শ্রেণীতে ভর্তি হন এবং সেখান থেকেই বিএ এবং এমএ সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি ব্যুরো অব ইকোনমিক্স -এ যোগ দেন গবেষণা সহকারী হিসাবে যোগদান করেন। পরবর্তীকালে ১৯৬২ সালে চট্টগ্রাম কলেজে প্রভাষক পদে যোগদান করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যান এবং পূর্ণ বৃত্তি নিয়ে ভেন্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১৯৬৯ সালে অর্থনীতিতে পিএইচডি লাভ করেন। ইউনূস বাংলাদেশে ফিরে আসার আগে ১৯৬৯ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত মিডল টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের পক্ষে বিদেশে জনমত গড়ে তোলা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা প্রদানের জন্য সাংগঠনিক কাজে নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৭২ সালে দেশে ফিরে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন এবং বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালে তিনি অধ্যাপক পদে উন্নীত হন এবং ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত এ পদে কর্মরত ছিলেন।
ইউনুস দারিদ্র্যতার বিরুদ্ধে তার সংগ্রাম শুরু করেন ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত দুর্ভিক্ষের সময়। তিনি বুঝতে পারেন স্বল্প পরিমাণে ঋণ দরিদ্র মানুষের জীবন মান উন্নয়নে অত্যন্ত কার্যকরী হতে পারে। সেই সময়ে তিনি গবেষণার লক্ষ্যে গ্রামীণ অর্থনৈতিক প্রকল্প চালু করেন। ১৯৭৪ সালে মুহাম্মদ ইউনুস তেভাগা খামার প্রতিষ্ঠা করেন যা সরকার প্যাকেজ প্রোগ্রামের আওতায় অধিগ্রহণ করে।

গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠা

মুহাম্মদ ইউনূস ১৯৭৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন গরিব বাংলাদেশীদের মধ্যে ঋণ দেবার জন্য। তখন থেকে গ্রামীণ ব্যাংক ৫.৩ মিলিয়ন ঋণগ্রহীতার মধ্যে ৫.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ প্রদান করে। ঋণের টাকা ফেরত নিশ্চিত করার জন্য গ্রামীণ ব্যাংক “সংহতি দল” পদ্ধতি ব্যবহার করে। একটি অনানুষ্ঠানিক ছোট দল একত্রে ঋণের জন্য আবেদন করে এবং এর সদস্যবৃন্দ একে অন্যের জামিনদার হিসেবে থাকে এবং একে অন্যের উন্নয়নে সাহায্য করে। ব্যাংকের পরিধি বাড়ার সাথে সাথে গরিবকে রক্ষা করার জন্য ব্যাংক অন্যান্য পদ্ধতিও প্রয়োগ করে। ক্ষুদ্রঋণের সাথে যোগ হয় গৃহঋণ, মৎস খামাড় এবং সেচ ঋণ প্রকল্প সহ অন্যান্য ব্যাংকিং ব্যবস্থা। গরিবের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গ্রামীণ ব্যাংকের সাফল্য উন্নত বিশ্ব এমন কি যুক্তরাষ্ট্র সহ অন্যান্য শিল্পোন্নত দেশসমূহকে গ্রামীণের এই মডেল ব্যবহার করতে উদ্বুদ্ধ হয়।
প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ
Banker to the Poor:Micro-lending and The battle against World Proverty. (১৯৯৮)
Three Farmers of Jobra; Department of Economics, Chittagong University; (১৯৭৪)

প্রাথমিক চিন্তা

ড. ইউনূস দেখেন, গ্রামের মানুষ ছোট ঋণের জন্য মহাজনের কাছে যান। মহাজনরা উচ্চ সুদ নেয়। তিনি এই সমস্যার সমাধান করতে চান।

প্রথম ঋণ

ড. ইউনূস প্রথমে নিজে ২৭ ডলার ঋণ দেন। এই ঋণ ৪২ জন গ্রামীণ মহিলার মধ্যে বিতরণ করেন।

মাইক্রোক্রেডিট ধারণা

মাইক্রোক্রেডিট হলো ছোট ঋণ। এই ঋণ গরীব মানুষদের ব্যবসা শুরু করতে সহায়তা করে।

মাইক্রোক্রেডিটের উপকারিতা

  • গরীব মানুষদের আত্মনির্ভরশীল করে।
  • নারীদের ক্ষমতায়ন করে।
  • উন্নয়নের গতিকে ত্বরান্বিত করে।

মাইক্রোক্রেডিটের কার্যক্রম

মাইক্রোক্রেডিটের মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংক ছোট ঋণ প্রদান করে। এই ঋণ ফেরত দেওয়ার সময়সীমা নির্ধারিত হয়।

ড. ইউনূসের পুরস্কার ও সম্মাননা

ড. ইউনূসের কাজের জন্য তিনি বহু পুরস্কার পেয়েছেন। তাঁর সবচেয়ে বড় পুরস্কার হলো নোবেল পুরস্কার।

নোবেল পুরস্কার

২০০৬ সালে ড. ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংক নোবেল শান্তি পুরস্কার পান।

অন্যান্য পুরস্কার

পুরস্কারের নাম বছর
বিশ্ব খাদ্য পুরস্কার ১৯৯৪
সিডনি শান্তি পুরস্কার ১৯৯৮

গ্রামীণ ব্যাংকের প্রভাব

গ্রামীণ ব্যাংকের প্রভাব সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। এটি অনেক দেশে মডেল হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

বাংলাদেশে প্রভাব

  • গরীব মানুষের জীবনমান উন্নত হয়েছে।
  • নারীদের ক্ষমতায়ন বেড়েছে।
  • অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

আন্তর্জাতিক প্রভাব

  • অনেক দেশ মাইক্রোক্রেডিট মডেল গ্রহণ করেছে।
  • বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য কমাতে সহায়তা করেছে।

ড. ইউনূসের অন্যান্য উদ্যোগ

ড. ইউনূস আরও অনেক উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।

গ্রামীণ টেলিকম

গ্রামীণ টেলিকম একটি টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি। এটি গ্রামীণ এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করেছে।

গ্রামীণ শক্তি

গ্রামীণ শক্তি সৌরশক্তি ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। এটি গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে।


উপসংহার

ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংক দারিদ্র্য বিমোচনে বিশাল ভূমিকা পালন করেছে। তাদের কাজ সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url